পরিচয়
হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন মহানবি (সা.)-এর আদরের কনিষ্ঠা কন্যা। হযরত আলী (রা.)-এর স্ত্রী। তাঁর উপাধি ছিল যাহরা। তাঁর মাতা ছিলেন হযরত খাদিজা (রা.)। তিনি ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত ফাতিমা (রা.)-এর শারীরিক অবয়ব, কথা বার্তা, স্বভাব প্রকৃতি ও চলাফেরার ধরন ছিল অবিকল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মত। এই মহীয়সী নারীর যাপিত জীবন সকল মুসলিম নারীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি জান্নাতি নারীগণের নেত্রী হবেন।
হযরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ
মহানবি (সা.) দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত আলী (রা.)-এর সাথে ফাতিমার বিবাহ দেন। হযরত আলী (রা.) বদর যুদ্ধ প্রাপ্ত লৌহ বর্ম উসমান (রা.)-এর নিকট ৪৮০ দিরহামে বিক্রি করেন। বিক্রিত অর্থ দিয়ে বিবাহের মহর ও অন্যান্য খরচ সমাধা করেন। হযরত আলী (রা.)-এর তেমন কোনো আসবাবপত্র ছিলো না। এমন কি কোনো দাস-দাসীও ছিলো না। তাই ফাতিমা (রা.)-কেই ঘরের সব কাজ করতে হতো। যাঁতাকল ঘুরাতে ঘুরাতে তাঁর হাতে ফোসকা পড়ে যায়। মশক ভর্তি পানি টানতে টানতে তাঁর কোমরে দাগ হয়ে যায়। আলী (রা.) ও ফাতিমা (রা.) এর এই বরকতময় সংসারে মোট পাঁচজন সন্তান জন্ম লাভ করেন। তাঁরা হলেন, যয়নব, হাসান, হুসাইন, মুহসিন ও উম্মে কুলসুম।
হাদিস শাস্ত্রে অবদান
হযরত ফাতিমা (রা.) সর্বমোট ১৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। তাঁর থেকে অনেক প্রসিদ্ধ সাহাবি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন, হযরত আলী, হযরত হাসান, হযরত হুসাইন, হযরত আয়েশা, হযরত উম্মে কুলসুম, হযরত সালমা, হযরত উম্মে রাফে, হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) প্রমুখ সাহাবির নাম উল্লেখযোগ্য।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন আদর্শ জননী; একজন আদর্শ স্ত্রী; একজন আদর্শ সমাজ-সেবিকা; একজন সত্যবাদী ও পুণ্যবতী নারী। রাত জেগে তিনি ইবাদাত করতেন। প্রায়ই রোযা রাখতেন।
দানশীলতা
হযরত ফাতিমা (রা.) গরিব-দুঃখীকে অতিমাত্রায় দান-খয়রাত করতেন। একদিন একজন আরব বৃদ্ধ মুহাজির রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আসেন। ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলেন, 'ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে খাদ্যবান করুন। আমার পরনে কাপড় নেই, আমাকে পরিধেয় বস্ত্রদান করুন। আমি নিঃস্থ, দরিদ্র, আমাকে দয়া করে কিছু দিন।' রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'আমার কাছে এখন দেওয়ার মতো কিছু নেই। তুমি ফাতিমার বাড়িতে যাও। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালোবাসে। সে আল্লাহর পথে দান করে থাকে।' বৃদ্ধ লোকটি ফাতিমা (রা.)-এর বাড়িতে গেলেন। ফাতিমা (রা.) এর কাছে তার প্রয়োজনের কথা খুলে বললেন। অথচ হযরত ফাতেমা (রা.), হযরত আলী (রা.) ও রাসুল (সা.) তিনদিন যাবত কিছু খাননি। হযরত ফাতিমা দুম্বার চামড়া বিশিষ্ট হাসান ও হুসাইনের বিছানাটি হাতে তুলে নিয়ে বললেন, 'হে দরজার বাহিরে দণ্ডায়মান ব্যক্তি। এটা নিয়ে যাও। আশা করি আল্লাহ তোমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন'।
আরব বৃদ্ধটি বললেন, 'হে মুহাম্মাদ (সা.)-এর কন্যা। আপনার কাছে আমি ক্ষুধা নিবারণের কথা বলেছি আর আপনি আমাকে পশুর চামড়া দিচ্ছেন। আমি এ চামড়া দিয়ে কী করবো? হযরত ফাতিমা বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে তাঁর গলার হারটি খুলে তাকে দান করে দিলেন। আর বললেন, 'এটাকে নিয়ে বিক্রি কর। আশা করি আল্লাহ তোমাকে এর চেয়ে আরো উত্তম কিছু দান করবেন'। এভাবে তিনি তাঁর প্রিয় বস্তু দানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে অনুসরণীয় হয়ে রইলেন।
বদান্যতা
একবার হযরত ফাতিমা (রা.) হস্তচালিত যাঁতাকল দিয়ে আটা তৈরি করছিলেন। যাঁতাকলের হাতল ঘুরাতে গিয়ে ফাতিমা (রা.)-এর হাতের ক্ষতস্থান হতে রক্ত বের হচ্ছিল। তখন শিশু হুসাইন তাঁর পাশে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিলেন। একজন সাহাবি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'হে রাসুলের কন্যা। আপনার হাতে ক্ষত হয়ে গেছে। 'ফিদ্দা' (ফাতিমার গৃহপরিচারিকার নাম) তো আপনার ঘরেই আছে।' তখন ফাতিমা বললেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে আদেশ করেছেন যে, পালাক্রমে একদিন ফিদ্দা ঘরের কাজ করবে। আর আমি অন্য একদিন। তার পালা গতকাল শেষ হয়ে গেছে। আজ আমার পালা।'
ইন্তেকাল
মহানবি (সা.) ইন্তেকালের ছয়মাস পর হিজরি ১১ সালের রমযান মাসে হযরত ফাতিমা ইন্তেকাল করেন। তাঁর অসিয়ত অনুসারে জানাযা দিয়ে তাঁকে রাতে দাফন করা হয়।
Read more